Surojit Sen writes about his experience of engaging with fakiri songs

Surojit Sen is an independent researcher of culture in Bengal and he specialises in mystical music: the songs of the bauls and the fakirs. A long-time associate of independent filmmakers such as Ruchir Joshi, Amitabh Chakraborty and now Q, he has guided them in their journeys into these worlds of music. He was part of the making of Ruchir’s Eleven Miles, Q’s Love in India and Amitabh’s Bishar Blues—all award-winning documentaries. Here he has written about his experiences during the shoot of Bishar and his memory of that experience. As a grantee of India Foundation for the Arts, Bangalore, Surojit had created a book on his meetings with the fakirs of Bengal, titled Fakirnama. To know more, see an introductory film on his work at http://vimeo.com/55259731.

Surojit’s flair for writing is in Bangla and we asked him to choose his language. In the short note below, he writes about Amitabh’s film on the fakirs of Bengal; about lives lived in music. Partha Barman, the sound recordist, was busy recording, Surojit writes, while he was engaged in intense listening. Somewhere, perhaps unconsciously, Surojit is talking about different kinds of listening. Now we will listen to the songs that Surojit has brought to our pages (hopefully with permission from his colleagues) and again these will be other kinds of listening.

Surojit Sen lives in Chandannagar. The recordings from his Fakirnama project are archived at ARCE, Gurgaon.

__________________________

দ্বীন দুনিয়ার গান

১.
আমার বন্ধু অমিতাভ চক্রবর্তী-কে একবার কথায় কথায় ফকিরদের গানের কথা বলেছিলাম। আমার নিজেরও খুব একটা ধারণা ছিল না সে সম্পর্কে, একটা দুটো গান শোনা ছাড়া। তো অমিতাভ মেতে উঠল তাদের নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম করবে বলে আর আমাকে জুটিয়ে নিলে তার সঙ্গে। বাংলার বিভিন্ন গ্রামে ফকিরদের বাড়ি, আখড়া, উৎসবে, ঘুরে বেড়াচ্ছি, যে সব ফকিরদের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে থাকছি, খাচ্ছি, গান শুনছি আর দিনযাপনের মধ্যে দিয়ে তাঁদের কথা, গান, দর্শন, পরিবার, সমাজ নিয়ে এক নতুন দুনিয়া উন্মোচিত হচ্ছে আমার সামনে যার নাম মারফতি দুনিয়া। তাঁদের ধর্মের নাম মারফতি ধর্ম, তাঁদের গানও এক অর্থে ধর্মীয় সঙ্গীত, যাকে বলা যায় দ্বীন দুনিয়ার গান।

আমরা যখন মেলা, মচ্ছবে, সাধুসভায় গান শুনছি আর সেই গান যন্ত্রে রেকর্ড করছে পার্থ, পার্থপ্রতিম বর্মন, আমাদের বন্ধু, পেশায় সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। তো সেই গান আমরা যেভাবে শুনে আনন্দ পেয়েছি, পার্থর কাছে সেটা কাজ, সে তখন শব্দ, গান ইত্যাদির গুণমান নিয়ে বিবেচনায় ব্যস্ত, জানি না ও সেভাবে উপভোগ করেছে কিনা। বিশেষত কোনো কোনো সময় যখন টানা ৪৫ মিনিট তাকে বুম রড মাথার উপর তুলে ধরে রাখতে হয়েছে রেকর্ডিং -এর স্বার্থে।

মনে আছে টানা ৩২ দিন শ্যুটিং হয়েছিল ‘বিশার ব্লুজ’-এর। যা বাংলার ফকিরদের নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র। শুরু হয়েছিল নদিয়ায়, এরপর মুর্শিদাবাদ ঘুরে শেষ হয়েছিল বীরভূমের পাথরচাপুড়িতে। প্রথম দিন আমরা ড্যাট-এ রেকর্ড করেছিলাম। পরের দিন সেই মেশিনটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় পার্থ ভিডিও ক্যামেরাতেই সব গান রেকর্ড করে। ১ মাস পরে যখন আমরা বীরভূমে পাথরচাপুড়িতে দাতা বাবার মেলায় গেছি, তখন আবার ড্যাট-এ রেকর্ড করা হয়েছিল। ততদিনে সেটি সারাই করে নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিন রেকর্ড করা হয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে একটি গ্রামে, ফকিরি গানের উৎসবে। যে মাঠে উৎসবটি হয়েছিল তার বাস স্টপেজটির নাম ৫১ মাইল। সন্ধ্যে ৭ টা থেকে গান শুরু হয়ে রাত ১২ টা অবধি চলল। মঞ্চে মাইকের ব্যবস্থা ছিল, মঞ্চের সামনে নিচে ছিল সাউন্ড মিক্সার যন্ত্র। তার কল্যাণে মাঝে মাঝেই বিচিত্র আওয়াজ হচ্ছিল মাইকে, ওদিকে গানও হচ্ছে। সেসব নিয়েই রেকর্ড করা হল।

২.
মাঠেঘাটে গান রেকর্ড করার হাজার হুজ্জোত, সেটা যাঁরা রেকর্ড করেন তাঁরা হাড়ে হাড়ে জানেন। যেমন দুবরাজপুরের কাছে ফকিরডাঙ্গায় আলম বাবার মাজারের গা ঘেঁষে চলে গেছে রেললাইন। যেখানে আনসাদ ফকির গাইছেন–

পাখি যদি মারবি ও ব্যাধ ও তুই সাবধানেতে নল চালা
শোন রে ও ব্যাধ তোরে বলি সাবধানেতে রাখিস ফলি
নইলে পাখি যাবে চলি দেখিয়া তোর সাধ নলা
পাখি যদি মারবি ও ব্যাধ ও তুই সাবধানেতে নল চালা।
পাখি মারার হিসাব আছে ও তুমি শিক্ষা নাও গো গুরুর কাছে
ও নইলে নল ধরা তোর হবে মিছে নল যাবে হেলাদোলা
পাখি যদি মারবি ও ব্যাধ ও তুই সাবধানেতে নল চালা।

গানের মাঝখানে ট্রেন এসে গেল, সেই ট্রেনের শব্দ গানে রয়ে গেল। পরে যতবার শুনেছি ওই গান ট্রেনের শব্দটি গানের অঙ্গ হয়ে গেছে আমার কানে। আনসাদকে আমিই আসতে বলি যাদবপুর বাউল ফকির উৎসবে। সেই মঞ্চে আনসাদ যখন ওই গান গাইল, ভাল লাগলেও তখন ট্রেনের শব্দ না থাকায় কানে গানটি অন্যরকম বাজল। একই সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে এই ধরনের গানের রেকর্ডিং শহরের স্টুডিওতে ভাল হয় না। আর ডকুমেন্টারি ফিল্মের শ্যুটিং -এর গান তো মাঠেঘাটেই রেকর্ড করতে হবে, বিশেষত গায়করা যখন মাঠেঘাটেই ঘুরে বেড়ান ও গান করেন।

৩.
পাথরচাপুড়ির দাতা বাবার মেলা ৩ দিনের, কিন্তু চলে প্রায় ১০ দিন। লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন সারা বাংলা থেকে। ওই ভিড়ের মধ্যে চলল আমাদের শ্যুটিং আর গানের রেকর্ডিং টানা ৩ দিন, রোজ ৪/৫ ঘন্টার জন্য ঘুমোতে যেতাম ৬/৭ কিলোমটার দূরে বক্রেশ্বরের হোটেলে। এত হই হট্টগোলের মধ্যেও আমাদের প্রাপ্তি ছিল শান্তি ফকিরের গান। মূল মেলা থেকে একটু দূরে বশির বাবার আশ্রমে দেখা পেয়েছিলাম শান্তি ফকিরের। কালো রঙের ছোটোখাটো চেহারার মানুষটির পরনে কালো পাঞ্জাবি আর নীল লুঙ্গি। হাতের কল্কেটি পাশের জনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কোলের কাছে রাখা ছোটো হারমোনিয়ামে দ্রুত আঙুল চালিয়ে প্রস্তুত হলেন, পাশের এক ফকির তুলে নিলেন তাঁর চিমটে, আরেক ফকির চাঁটি মারলেন তাঁর সানকিতে, গান শুরু হল,

হেরা গুহায় নাজেল কোরান
উহার সন্ধান করলি না রে
সাত অক্ষরে নাজেল কোরান
হাদিসে তার ঠিকানা রে
শয়তান যারে দেয় ধোঁকা
বোঝে না কোরান সে বোকা
আজাজিল ধরেছে তারে
কামেল মুর্শিদ চিনল না রে ……

গলাটা উঁচু তারে বাঁধা, একটু কর্কশ, কিন্তু একটা নেশা ধরানো ব্যাপার আছে। পরপর ৪টে গান গাইলেন। হোটেলে ফিরে সেই গান শুনে আমাদের মন ভরে গেল আর বুঝলাম একটা ভুল হয়ে গেছে, ওনার ঠিকানা নেওয়া হয় নি। তারপর দুবার পাথরচাপুড়িতে গিয়ে শান্তি ফকিরের খোঁজ করেছি, বীরভূমের অন্য ফকিরদের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ কিছু বলতে পারেনি।

All recordings were made in March, 2004.


 

__________________________